মাহে রমাযান ও শবে কদর

মাহে রমাযান ও শবে কদর

আজকের এই লেখাটি দ্বারা মাহে রমাযানের ও শবে কদরের ফজিলত ও সময়কাল সম্পর্কে ধারনা পাবেন।

বিশ্ব মানবতার মুক্তিবার্তা নিয়ে মুসলমানদের জীবনযাত্রায় বছর ঘুরে মাহে রমযান আবারো উপস্থিত। এ মাসেই রয়েছে হাজার মাসের শ্রেষ্ঠ রজনি লাইলাতুল কদর। যে রজনিতে অবতীর্ণ হয় মানজাতির মুক্তির সনদ মহাগ্রন্থ আল কুরআন। মাহে রমযান ও লাইলাতুল কদরের আগমন উপলক্ষে আমাদের ব্লগ পোষ্টটি।

মাহে রমাযান

মাহে রমযান’ অর্থ রমযানের মাস। ‘রমযান’ শব্দটি আরমি ‘রময’ থেকে এসেছে। ‘রময’ অর্থ দহন বা পোড়ানো। এ মাসে রোযা পালন করলে মানুষের মধ্যে থেকে লোভ-লালসা, পাপ-পঙ্কিলতা ও হিংসা-বিদ্বেষ দূরীভূত হয়। রোযা পালনকারী রমযানে তার সব পাপ মুছে ফেলার সুযোগ লাভ করে। রমযান মাসে পালিত রোযাকেই রমযানের রোজা বলা হয়।

রোযা

‘রোযা’ ফারসি শব্দ। এর আরবি প্রতিশব্দ ‘সাওম’ বা ‘সিয়াম’। এর আভিধানিক বা শাব্দিক অর্থ ‘বিরত থাকা’। ইসলামি শরীয়তের পরিভাষায় সাওম হলো সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার এবং ইন্দ্রিয় তৃপ্তি থেকে বিরত থাকা। আল্লাহ বলেন ‘হে ঈমানদারগন! তোমাদের ওপর রোযা ফরজ করে দেওয়া হয়েছে যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করে দেওয়া হয়েছিল। আশা করা যায় এ থেকে তোমাদের মধ্যে তাক্বওয়ার গুনাবলি সৃষ্টি হবে।’ [সুরা আল-বাকারা:১৮৩] মাহে রমযানের পুরো এক মাসের রোজা তিনটি পর্বে বিভক্ত। প্রথম ১০ দিন রহমত, দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাত এবং তৃতীয় ১০ দিন নাজাতের সময় বলা হয়।

রমযান মাসের ফজিলত:

১। রমযান মাসেই কুরআন অবতীর্ণ হয় ও রোযা ফরজ হয়। এটি লাইলাতুল কদরের মাস, এ মাসের একটি ফরজ অন্য মাসের সত্তরটি ফরসের সমতুল্য, আর একটি নফল অন্য মাসের একটি ফরজের সমতুল।

২। রমযান মাসের ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রমযান’ বরকতময় মাস তোমাদের দুয়ারে উপস্থিত হয়েছে। পুরো মাস রোযা পালন আল্লাহ তোমাদের জন্য  ফরজ করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, বন্ধ করে দেওয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। দুষ্ট শয়তানদের এ মাসে শৃঙ্খলাবন্ধ করে দেওয়া হয়।

৩। যে ব্যক্তি রমযান পেল অথচ নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারলো না, সে ব্যক্তি ধ্বংস হোক ( বুখারি, তিরমিযি)

রমযান মাসে যা বর্জনীয়

  • অপ্রয়োজনীয়, অশ্লীল ও মিথ্যা কথা-বার্তা না বলা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কত রোজা পালনকারী এমন আছে, (রোযা অবস্থায় অশ্লীল কথা ও কর্ম থেকে বিরত না থাকার ফলে) ক্ষুধা ও পিপাসা  ছাড়া রোযা থেকে সে আর কিছু লাভ করতে পারে না। (ইবনে মাজাহ)
  • সকল প্রকার গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা।

শবে কদর

শবে কদর ফারসি শব্দ। আরবিতে একে লাইলাতুল কদর বলে। অর্থ সম্মানিত, মর্যাদাপূর্ণ ও মহিমান্বিত, সম্ভাবনাময়, ভাগ্যনির্ধারনী রজনী। শবে কদর পবিত্র কুরআন নাজিলের রাত। এ রাতেই প্রথম মক্কায় হেরা পর্বতের গুহায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হয়রত মুহাম্মাদ (সা.) এর প্রতি মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাযিল করেন। এ কারণে আল্লাহ তায়ালা এ রাতের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন।

সময়কাল

রাসুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা রমযানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে শবে কদর সন্ধান করো (মুসলিম)। এ রাতগুলো হলো ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯। আরবিতে দিনের আগে রাত গণনা করা হয়। অর্থাৎ ২০,২২,২৪,২৬ ও ২৮ রমযান দিবাগত রাতসমূহ।

উৎপত্তি

পূর্ববর্তী নদী ও তাদের উম্মতগণ দীর্ঘায়ু লাভ করার কারণে বহু বছর আল্লাহর ইবাদত করার সুযোগ পেতেন। কিন্তু মহানবী (সা.) এবং তার উম্মতের আয়ু অনেক কম হওয়ায় তাদের পক্ষে আল্লাহর ইবাদত করে পূর্ববর্তীদের সমকক্ষ হওয়া কিছুতেই সম্ভবপর নয়। সাহাবায়  কেরামগণের এ আক্ষেপের প্রেক্ষিতে আল্লাহ সূরা কদর অবতীর্ণ করার মাধ্যমে শবে কদরের মতো মহা নেয়ামত দান করেন।

শবে কদরের ফজিলত

আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয়ই আমি এটি ( অর্থাৎ কুরআন) লাইলাতুল কদরে নাযিল করেছি। তুমি কি জানো লাইলাতুল  কদর কী। লাইলাতুল কদর এক হাজার মাস অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ। এ রাতে ফেরেশতা ও রুহরা নেমে আসে প্রতিপালকের অপার অনুগ্রহ নিয়ে। উষালগ্ন পর্যন্ত বর্ষণ করে সমস্ত অকল্যাণ থেকে নিরাপত্তা ও শান্তি’ (সূরা: কদর)। এ রাতে মহান আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মাদিকে হাজার মাসের ইবাদত-বন্দেগি ও আমলের সমান সওয়াব দান করেন। লাইলাতুল কদর সম্পর্কে মহানবী (সা.)  বলেন, যে ব্যক্তি এ রাত ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করবে, আল্লাহ তার পূর্বেকৃত সব গুনাহ মাফ করে দেবেন। (বুখারী)

পরিশেষে পবিত্র রমযান মাসে সঠিকভাবে রোযা পালন, উত্তম চরিত্র গঠনের অনুশীলন, কুরআন অর্থসহ বুঝে পড়া ও সদকায়ে জারিয়া বেশি বেশি করতে পারলে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাকওয়া ও সংযমের মহামূল্য সম্পদ দান করবেন, যার মাধ্যমে ইহকালীন ও পরকালীন প্রভূত কল্যাণের দ্বার উন্মুক্ত হবে।

আপনি যদি বাংলায় প্রত্যয়ন লিখা দরকার হয় তাহলে এখানে ক্লিক করুন: বাংলায় প্রত্যয়ন পত্র লেখার নিয়ম

সারকথা: আমরা এখানে যে লেখাটি পোষ্ট করেছি সেটা বিভিন্ন সোর্স থেকে সংগ্রহ করা। তবে অবশ্যই দ্বীনের ( ইসলামী বিধিবিধান) জানার ক্ষেত্রে আলেমদের থেকে অবশ্যই জানবেন। ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *